ক্র্যাক প্লাটুনের কনিষ্ঠতম সদস্য শহীদ বকর

শহীদ বকর ক্র্যাক প্লাটুনের কনিষ্ঠতম সদস্য



ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য শহীদ বকর
ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য শহীদ বকর

শহীদ বকর জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৩ সালের ৫ই মে, সৈয়দপুরে, বাবা আবু জাফর এবং মা আনোয়ারা খাতুন এর পঞ্চম সন্তান ছিলেন শহীদ বকর।
মেধাবী ছাত্র হিসেবে বকরের বেশ সুনাম ছিলো । শহীদ বকর সৈয়দপুর হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন । একাত্তরে তৎকালীন কায়েদ-ই-আযম (বর্তমানে সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ) কলেজ থেকে ইন্টার পাশ করে বিএসসিতে ভর্তি হয় । পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার্স কোর্সে যোগদানের অপেক্ষাতেও ছিলেন ।

২৫শে মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্থানী মিলিটারি কর্তৃক নিরীহ বাঙালীর উপর সংগঠিত ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম গণহত্যার ঘটনার সাক্ষী হবার পর সবকিছু পাল্টে যায়। ২৫শে মার্চের গণহত্যার পর বকর তার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে দেখে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার হত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞের নির্মম নির্দশণ । সেই থেকে ১৮ বছরের বয়সী বকর ভেতরে ভেতরে পুড়ছিলো এবং একটি কথাই তাঁর মন থেকে উঠে আসছিলো – এভাবে বেঁচে থাকা যায় না ।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে শহীদ বকর ভারতের মেলাঘর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে জুলাইয়ের শুরুতে ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায় ক্র্যাক-প্লাটুনের সদস্যরা দুঃসাহসী বেশ কয়েকটি অপারেশন করে তখন তাক লাগিয়েছিলেন। এর মধ্যে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (বর্তমানে রূপসী বাংলা) অপারেশন অন্যতম। তাঁরা এই হোটেলে দুবার অপারেশন করেন। প্রথম জুনে, দ্বিতীয়বার ১১ আগস্ট। দ্বিতীয় অপারেশনের মূল নায়ক ছিলেন ক্র্যাক-প্লাটুনের কনিষ্ঠ সদস্য- মোঃ আবু বকর। বিশ্ব সংবাদপত্রে রোমাঞ্চকর এই অপারেশনের খবর প্রকাশিত হয় বেশ গুরুত্ব সহকারে।

১৯৭১ সালের আগস্টের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানী আর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন বাড়ীতে হানা দেয়, ঢাকার অভ্যন্তরে পাকিস্তানী সৈন্যদের জন্য ত্রাস হয়ে আবির্ভূত হওয়া ক্র্যাক-প্লাটুনের গেরিলা সদস্যদের পাকড়াও করাই ছিলো সেই অভিযানের মূল লক্ষ্য । ২৯ তারিখ বেলা এগারটা থেকে শুরু হয়ে পরের দিন ৩০ আগস্ট ভোর পর্যন্ত চলে সেই অভিযান, ধরা পড়ে অনেকেই, অনেক’কেই আবার পরবর্তীতে ছেড়ে দেয়া হয় । সেই অভিযানে গ্রেফতার হওয়া সাত জন আর কখনোই ফিরে আসেনি – শহীদ রুমী, শহীদ আজাদ, শহীদ জুয়েল, শহীদ আলতাফ মাহমুদ, শহীদ হাফিজ, শহীদ বদি এবং শহীদ বকর । নাঁখালপাড়া ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এমপি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলে পাকিস্থানী আর্মিদের দ্বারা অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয় এই সাতজন । নাক-মুখ ফেঁটে রক্ত বের হয়েছে, কোটর থেকে চোখ খুলে এসেছে, হাড়গোর ভেঙ্গে দিয়েছে, অসহ্য ব্যাথায় চিৎকার করতে করতে জ্ঞান হারিয়েছে, এতকিছু সয়েও ওঁরা একটি বারের জন্যেও মুখ খুলেনি ।

তারপর আর আমরা কিছু জানি না – অসহ্য নির্যাতন সইতে সইতে হয়তো ওঁরা মারা গেছে, নয়তো পাকিস্থানী পশুরুপী আর্মিগুলো ধৈর্যচ্যুত হয়ে কোথাও নিয়ে গিয়ে মাটি চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে, কি ঘটেছে ওঁদের সাথে, কেউ জানে না । ৩১শে আগস্টের পর ওঁদের সম্পর্কে আর কোন সুনিশ্চিত খবর পাওয়া যায়নি । স্বাধীন দেশে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বজনেরা বদ্ধভূমিগুলোতে চষে বেড়িয়েছে, না, ওঁদের লাশও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

ক্র্যাক প্লাটুনের কনিষ্ঠ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ বকর এর জন্মদিনে ক্লাব অবসকিওরের পক্ষ থেকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

কার্টেসী: শাওন মাহমুদ।

No comments

Powered by Blogger.