আখাউড়া যুদ্ধ- বিডিআরের বীরত্বে যেদিন লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ


আখাউড়া যুদ্ধের ১৬ বছরঃ বিডিআরের বীরত্বে যেদিন লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ

১৬ এপ্রিল ২০০৫। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার সীমান্তবর্তী হিরাপুর গ্রাম দখলের উদ্দেশ্যে এক প্লাটুন (২৫-৩০ জন) বিএসএফ সদস্য আরো ৭০-৮০ জন বেসামরিক ভারতীয় নাগরিকসহ গ্রামটিতে প্রবেশ করে। তারা আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশের ভেতর অন্তত ৩০০ গজ প্রবেশ করে এবং এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ও মারধর করে গ্রামবাসীকে আতঙ্কিত করে তোলে। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী বিওপি থেকে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদস্যরা এসে বিএসএফ-কে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। এতে বিডিআরের সাথে বিএসএফের বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। টানা ৫ ঘন্টা উভয়পক্ষে থেমে থেমে গোলাগুলি চলতে থাকে। উল্লেখ্য, এই সময়ই বিডিআর সদস্যরা সীমান্তের কাছেই অবস্থিত ভারতের আগরতলা বিমানবন্দরে মর্টার হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় বিএসএফের অ্যাসিস্টেন্ট কোম্পানি কমান্ডার জীবন কুমার এবং কনস্টেবল কে কে সুরিন্দার নিহত হন। বিডিআরের তীব্র প্রতিরোধে টিকতে না পেরে বিএসএফ সদস্যরা তাদের কমান্ডারের লাশ ফেলেই হীরাপুর গ্রাম ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়। কনস্টেবল সুরিন্দার অবশ্য শুরুতে মারা যাননি, আহত অবস্থায় তাকে ফেলে বিএসএফ চলে গিয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি মারা যান। বিডিআরের পক্ষে কেউ নিহত হননি।

সংঘর্ষের পর দুই বাহিনীর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকে বিএসএফের কমান্ডার প্রথমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের কথা অস্বীকার করেন। অথচ তারপরই তিনি বাংলাদেশের ৪০০ গজ ভেতরে তাদের নিখোঁজ দুই সদস্যের খোঁজে যৌথ সার্চ অপারেশন চালানোর প্রস্তাব দেন। এতে পরিষ্কার হয়ে যায় যে বিএসএফ সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল।

শেষপর্যন্ত বাংলাদেশের ভেতর প্রবেশের কথা স্বীকার করলে বিডিআরের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুজ্জামান বিএসএফ-কে এক সেকশন (১২ জন) সৈন্য নিয়ে বাংলাদেশের সীমানার ৪০০ গজ ভেতর পর্যন্ত সার্চ করার অনুমতি দেন।

এই সার্চ অপারেশন চলার সময় উভয়পক্ষে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল, বিশেষ করে বিএসএফের কমান্ডারের লাশ উদ্ধারের সময়। দুই বাহিনীরই ব্যাটালিয়ন কমান্ডার উপস্থিত ছিলেন এবং সৈন্যরা মেশিনগানসহ ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল৷ অবশ্য শেষপর্যন্ত আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মধ্যরাতে বিডিআর নিহত দুই বিএসএফ সদস্যের দেহ হস্তান্তর করে। উল্লেখ্য, দুজনের দেহই বাংলাদেশের সীমানার ৩০০ গজ ভেতরে পাওয়া গিয়েছিল।

এরপর টানা ২০ দিন দুই দেশই সীমান্তে ভারী অস্ত্রসহ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছিল। দুই বাহিনীর শীর্ষ অফিসাররা আখাউড়া পরিদর্শনে আসেন।

২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি (বিডিআর বিদ্রোহের আগেরদিন) পিলখানায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেইদিনের আখাউড়া যুদ্ধের নায়ক আখাউড়ার বিডিআরের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার কর্নেল কামরুজ্জামানসহ দুইজনকে বিডিআরের সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক পদক বাংলাদেশ রাইফেলস মেডেল প্রদান করেন। এছাড়াও একই যুদ্ধে সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ বিডিআরের তিনজনকে প্রেসিডেন্টস রাইফেল মেডেল এবং আটজনকে ডিজি কমেনডেশন পদক দেওয়া হয়।

© Ferdous Yusuf

তথ্যসূত্রঃ কর্নেল (অব.) কামরুজ্জামান স্যারের লেখা, উইকিপিডিয়া এবং বিডিনিউজ-২৪.কম
#Late_Post

No comments

Powered by Blogger.