বিশ্বের সেরা স্পেশাল ফোর্স: স্পেশাল এয়ার সার্ভিস (SAS)
3: SAS – United Kingdom
১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ব্রিটিশ আর্মির বিশেষ রেজিমেন্ট হিসেবে গঠিত হওয়া স্পেশাল এয়ার সার্ভিস (SAS) স্পেশাল ফোর্স। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৯৮০ সালে ইরানি দূতাবাসে হামলার পর সাফল্যের সঙ্গে পণবন্দিদের উদ্ধার করে খ্যাতি অর্জন করে এই বাহিনী। মাত্র ১৭ মিনিটেই এক অসাধারন হোস্টেজ রেসকিউ অপারেশন পরিচালনা করে এ স্পেশাল ফোর্স টি সর্বপ্রথম সারা বিশ্বের নজর কাড়ে, সে অপারেশন এর ই নাম হলো অপারেশন নিমরোড। বিশ্বের অন্যতম সেরা ও অনুকরনীয় অপারেশন হিসেবে ধরা হয় এটিকে।
ট্রেনিংঃ-
SAS-এর ট্রেনিং-কে ধরা হয় বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। এই ট্রেনিং-এ ১০%-এরও কম ভলান্টিয়ার উত্তীর্ণ হতে পারে! ট্রেনিং করতে গিয়ে মারা যাওয়ারও রেকর্ডরয়েছে SAS এর খাতায়!
সমস্ত সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান সদস্য বিশেষ বাহিনী নির্বাচনের জন্য আবেদন করতে পারেন, তবে ঐতিহ্যগতভাবে অধিকাংশ প্রার্থী কমান্ডো অথবা বিমানবাহিনী বাহিনী হতে আসে।গ্রীষ্ম এবং শীতকাল, বাছাই হয় বছরের এই দুই সময়ে সেন্নিব্রিজ এবং ব্রেকন বিকনসে।
পাঁচ সপ্তাহ মেয়াদী এই বাছাই পর্বে সাধারণত ২০০ সম্ভাব্য প্রার্থীকে বাছাই করা হয়।এখানে আসার শুরুতেই প্রার্থীকে পার্সোনাল ফিটনেস টেস্ট (পিএফটি) এবং একটি বার্ষিক বা এন্যুয়াল ফিটনেস টেস্ট (এএফটি) দিতে হয়। তারপর তারা লম্বা সময়ের জন্য হাঁটা শুরু করে। প্রতিদিনই হাঁটার দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করা হয়। সমস্ত সরঞ্জামসহ নিরুত্তাপ হয়ে ৬৪ কিমি হেঁটে ২০ ঘণ্টার মধ্যে পেন ই ফ্যানের শিখরে চড়তে হয়। পর্বত পর্ব শেষে প্রার্থীকে ৩০ মিনিটে ৩.২ কিলোমিটার দৌঁড়াতে হয় এবং ৯০ মিনিটের মধ্যে ৬.৪ কিমি সাঁতরাতে হয়।
পাহাড় পর্ব শেষে শুরু হয় জঙ্গল পর্ব। এটার জন্য যেতে হয় বেলিজ, ব্রুনেই অথবা মালয়েশিয়াতে। এখানে প্রার্থীকে নেভিগেশন, টহল দল গঠন/চলাফেরা এবং জঙ্গলে বেঁচে থাকার কৌশল শেখানো হয়।হেয়ারফোর্ডে ফিরে গিয়ে যুদ্ধ কৌশল এবং বিদেশী অস্ত্র চালনা ও যুদ্ধে বেঁচে থাকার অনুশিলন করার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ শেষ হয়।শেষেরটায় সপ্তাহ ব্যাপী পালিয়ে ও ফাঁকি দিয়ে বেঁচে থাকার অনুশিলন মাত্র। এসময়ে প্রার্থীকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার উর্দি পড়িয়ে এক টিন বেঁচে থাকার সরঞ্জামাদি দিয়ে টহলে পাঠানো হয় এবং নির্দিষ্ট একটা বিন্দুকে লক্ষ্য করে এগুতে বলা হয়। চুড়ান্ত নির্বাচনে ৩৬ঘন্টা ব্যাপী বিরক্তিকর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় যাকে বলে- রেজিস্ট্যান্স টু ইন্টারোগেশন (RIT)
সাধারণত, ১৫-২০% প্রার্থী পাহড়ী পর্ব সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়। প্রায় ২০০ জন প্রার্থীর বেশির ভাগই প্রথম কয়েক দিনে বাদ পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত, কমবেশি ৩০ জন টিকে থাকে।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগ MI-5 এবং MI-6 এর প্রশিক্ষকরা হাতে কলমে সন্ত্রাস দমন এবং জিম্মি উদ্ধারের কলাকৌশল শিখিয়ে দেয় আর Navy SEAL-দের সব ধরনের ট্রেনিং-তো SAS এর সিলেবাসে রয়েছেই।
যারা সকল পর্ব সম্পন্ন করতে সক্ষম হয় তাদেরকে পুরস্কার দিয়ে একটি অপারেশনাল স্ক্রোয়াড্রনে বদলি করা হয়।
অস্ত্রশস্ত্রঃ
- UCIW (Ultra Compact Individual Weapon) 5.56x45mm
- M4 Carbine
- Heckler & Koch HK33
- HK33
- HK53
- Heckler & Koch G3
- Heckler & Koch PSG-1
- Heckler & Koch G36
- Heckler & Koch MP5
- MAC-10
- Browning Hi Power
- L9A1
- P226 pistols
- SIG-Sauer P226
- Glock 17
- Glock 19
- Heckler & Koch HK417
- Accuracy International Arctic Warfare .50 Caliber
- Remington 870
অন্যান্য বিশেষ বাহিনীর উপর প্রভাবঃ-
মূলত SAS কেই আদর্শ ধরে বিশ্বের অন্যান্য দেশ গড়ে তুলেছে নিজেদের স্পেশাল ফোর্স। কমনওয়েলথভুক্ত দেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং রোডেশিয়া ছাড়াও বেলজিয়াম, ফ্রান্স, ফিলিপাইন, আয়ারল্যান্ডও রয়েছে এই তালিকার মধ্যে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ডেলটা ফোর্স এবং ইসরাইলের সাইয়্যেরাত মেতকালও SAS-এর নিয়মনীতি ধার করে তৈরি হয়েছে।
স্পেশাল এয়ার সার্ভিসের ইতিহাস অন্য যেকোনো স্পেশাল এলিট ফোর্সের তুলনায় সমৃদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমান আরব বসন্ত পর্যন্ত কম করে হলেও সাত হাজার শত্রুকে ঘায়েল করেছে SAS এবং আটক করেছে আরও ২৩ হাজার! লন্ডনের ইরান দূতাবাস অবরোধ, উপসাগরীয় যুদ্ধ, ফকল্যান্ড যুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধসহ বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনেই SAS এর ভূমিকা রয়েছে।
চলমান....
No comments